নিগড়াবদ্ধ জীবন প্রবাহ !

বাবা (জুন ২০১২)

সেলিনা ইসলাম
  • ২৯
আমি একদিন খুব মন দিয়েই পরিক্ষার পড়া পড়ছি । আমার পাশেই মা বসে ছিলেন , হঠাৎ দেখি মা ওয়াক ওয়াক করতে করতে বাথ্রুমে গেলেন।তারপর থেকে বাসার সবার মাকে নিয়ে যে কি আনন্দ তা বলে বোঝাতে পারব না ! আমার আর রানুর দিকে কেউ খেয়ালই করে না । রানু আমার থেকে চার বছরের বড় কিন্তু ও তখনই নিজেকে আর আমাকে দেখে রাখত । আর দেখত মিনু বুয়া । দাদী ,চাচী সবাই মাকে অনেক অনেক আদর করত । মাও যেন সবার আদর পেয়ে আমাদের দুইবোনকে ভুলে গেলেন । একদিন আমাদের বাড়ীতে আরো একজন নতুন মানুষের আগমন হল । খেলনা আর নতুন নতুন জামা কাপড়ে মায়ের ঘরটা ভরে গেল । বাবা ঘরে নতুন পর্দা আর নতুন রঙ লাগালেন । কি সুন্দর লাগছে ঘরটা আর খাটে শুয়ে থাকা ছোট্ট ছেলেটাকে । সবাই বলল ছেলেটা আমাদের ভাই । আকিকা করে নাম রাখা হল রানু আর রুনুর সাথে মিলিয়ে রাজু । কিন্তু বাবা বলেন না তিনি রাজা বলে ডাকবেন । এই রাজাই নাকি বংশের বাতি ।দাদীও সারাক্ষন রাজা রাজা বলে ডাকে । আমি বা রানু রাজাকে কোলেতো দূরে থাক , ভাল করে দেখতেও পারিনা । মাও যেন কেমন হয়ে গেলেন ,সারাক্ষনই শুধু রাজা আর রাজা । দেখতে দেখতে সময় চলে যায় রাজাও বড় হয়। কিন্তু ও আমাকে আর রানুকে দেখলে দূরে দূরে থাকে ! বুঝতে পারলাম সবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে আর আদরের বিভেদ দেখে এই দূরত্বের সৃষ্টি ।

আমার দাদার বাবা মানে আমার পরদাদা কোন এক লোকের কাছ থেকে বেশ কিছু ধানী জমি , এবং নিত্যব্যবহার্য গৃহাস্থলির তৈজসপত্রসহ এই বাড়ীটি কিনেছিলেন । আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী পুরনো বাড়ীটা বাবার একমাত্র সম্বল । বাবা বেশ অহঙ্কার করেন এই বাড়ীটাকে নিয়ে । আমার দাদার মতই বাবার ধারনা জমিদারের সম্পত্তি কিনে তাঁরা নিজেরাই জমিদার হয়ে গেছেন । জমিদারের শেষ চিহ্নটুকু বাবার কাছে প্রাণতুল্য হলেও বাবার প্রতি এই বাড়ীর সামান্যতম মায়া নেই । পাঁপড়ের আঁকারে মুড়মুড় করে প্লাস্টারসহ জানালা দরোজাগুলোও বেরসিকের মত বিদায় নিচ্ছে । বাবার রক্তে জমিদারী না থাকলেও তার স্বভাবে ও মেজাজে আছে । গাম্ভীর্যতা আর স্বাভাবিকের চেয়ে যেন একটু বেশীই রুক্ষতা ! বাবাকে কোনদিন কাজ করতে দেখিনি আমি । তবে মাঝে মাঝেই কোথায় যেন যেতেন এবং বেশ কিছুদিন পরে ফিরে আসতেন বেশ সতেজ মেজাজ নিয়ে । তারপর চলতো মজার মজার খাবারের ধুম । মা রান্না করতে করতে হিমসিম খেতেন । পুকুরে জাল ফেলে ধরা হত বড় বড় মাছ । বাসায় সব সময় তখন আত্মীয় স্বজনের আনাগোনায় সরগরম থাকত । মা শহরের শিক্ষিত মেয়ে হওয়া স্বত্বেও বাবাকে কিছুই বলতেন না । তবে মাঝে মাঝে নাকি কান্না করতেন আর বলতেন-
-'আপনি এমন করে সবকিছু শেষ করে দিচ্ছেন এতে কি লাভ ? আপনার তিনটে ছেলে মেয়ে আছে তাদের কথা কি একবারও ভাব্বেন না ?
-'ওদেরকে নিয়ে ভাব্বার কি আছে ? রিজিকের মালিক আল্লাহ তিনিই দেখবেন । মেয়ে দুইটাকে বিয়ে দিলে শ্বশুর বাড়ী চলে যাবে আর ছেলে ? লেখাপড়া করছে যখন,তখন না খেয়ে থাকবে না ।'বাবা বেশ কড়া করেই কথাগুলো বলতেন । ধীরে ধীরে বাবার বয়স বাড়তে লাগল আর আমাদের বাসাও আস্তে আস্তে শুন্য হতে লাগল । বাবাকে শেষ কয়েকদিনের জন্য বাইরে যেতে দেখেছি দশ বছর আগে ,রানুর বিয়ের সময় । বেশ ধুমধাম করেই বাবা বড় মেয়ে রানুকে ক্লাস এইটে থাকতেই বিয়ে দিয়ে দেন । ভাল ছেলে পেলে নাকি হাতছাড়া করতে হয়না । মা আপত্তি করেছিল কিন্তু বাবা কানে তোলেননি । এক হিসাবে ভালই করেছেন না হলে রানুও আমার মত একটা জগত করে প্রতিদিন গল্প এঁকে যেত আর শেষ লাইনটা লিখতে না পেরে বর্ষায় স্নান করে নিজেকে কিছুটা হাল্কা করত ,আবার নতুন করে স্বপ্ন বুনে যেত ...!

ইদানীং বাসা থেকে বাবা খুব একটা কোথাও যাননা । তবে মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে বেশ খানিকক্ষন অপলক তাকিয়ে থাকে । তারপর কাঁপা হাতটা মাথায় রেখে বিড়বিড় করে আপন মনে কি যেন বলেন ।আমার আনত চোখেমুখে বাবার দীর্ঘশ্বাস ঝড় হাওয়ার আবেশ এনে , আমাকেও বাকরুদ্ধ করে দেয় ।আমি তখন একটা গর্জন শুনতে পাই ,যা বাবার হৃদয়টাকে ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দেয় !

আমার কাছে আমাদের এই বাড়ীর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে দোতালার দক্ষিনের শেষের দিকের বারান্দাটা । আমি প্রতিদিন এই বারান্দার মেঝেতে বসে রেলিঙের ফাঁকা দিয়ে কতরকম মানুষ দেখি ! কিন্তু আমাকে একজন ছাড়া কেউ কোনদিন দেখেনি । আমাদের বাড়ীর সামনের রাস্তা পেরোলেই কমার্স কলেজ । কলেজের পিছনের দিকটা আমার এই প্রিয় জায়গা থেকে একদম স্পষ্ট দেখা যায় । একদিন বসে আছি একটা মেয়ের কন্ঠ শুনি -
-'আরে...মগের মুল্লুক পেয়েছো নাকি ! যে ,যা ভাড়া চাইবে তাই দিতে হবে ?'
-'আমার যা ন্যায্য ভাড়া তাইতো দিবেন আফা'
-'এখানে ভাড়া দশটাকা তুমি পণের টাকা কেন চাইলে?'
-'আফা তের টাকা কইছি আমি ,আপনে কইছেন দশ টাকা'
-'আমি যা বলেছি তাই নেন . না নিলে না নেন'
-'আফা চাউলের কেজি বাইশ টেহা ,আপনে আসছেন সেই কত্ত দূর থাইকা । ঠাটা পড়া রৌদের মধ্যে যদি দুইডা টাকা না দেন আফা আমরা খামু কি?'
মেয়েটা কোন কথা না বলে দশ টাকার একটা নোট লোকটার দিকে ছুড়ে মেরে গটগট করে হেটে যেতে গিয়ে হাইহিল পরার দরুন পা বেঁকে পড়ে যেতে যায় ।
কিন্তু মাঝপথেই ধরে ফেলে একটা ছেলে । মেয়েটা পড়ে গেছে দেখে রিকশাচালক লোকটা বেশ আনন্দ পায় ।
-'গরিবরে ঠকাইলে এমনই হয় , আল্লাই বিচার হরে ...' কথাটা বলে আর দাঁড়ায় না সে , শাঁই করে চলে যায় ।কিন্তু আমার যে কি হয় মেয়েটাকে পড়ে যেতে দেখে আমি কখন যে দাঁড়িয়ে বলে ফেলেছি "আরে সাবধান" ছেলেটার সাথে একদণ্ড চোখাচোখি হয় । আমি সাথে সাথে বসে পড়ি । কিন্তু সেই থেকেই ছেলেটা আমাকে খোঁজে এবং সে এতোদিনে বুঝেও গেছে আমি এখানে বসে থাকি । কি এক নব আকর্ষণ আমাকে যেন আরো বেশী করে টেনে আনে এই জায়গাটাতে । চুপচাপ বসে থাকার মাঝেও একরকম আনন্দানুভূতি খেলা করে যায় আমার বন্ধ্যা জীবনে ।

আমাদের রাজা এই কলেজেই ভর্তি হয়েছে । বাবা এখন চুপচাপ বসে থাকে ইজি চেয়ারে । নীচের ঘরগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছে আর তাই দিয়েই গভীর জোড়াতালি দিয়ে চলছে জীবনের পাঠ । পুকুরটাও এখন অন্যদের উঁচু পাচিলে মোড়া বন্ধনহীন সাক্ষী ।মাঝে মাঝে রাজা আর বাবার চিৎকার এই বাড়ীর যত সামান্য প্রাণ । বাবা আর কাউকে নিয়েই নয় ,বংশের বাতি দিনদিন জ্বলে উঠার বদলে নীভে যাচ্ছে বলে ভাবনায় পড়েছেন । বাসায় এখন আমি , বাবা ,মা আর রাজা । সম্ভ্রমের পরিহাসে জানলায় শোভা পায় পূরানো শতছিদ্র কাপড় ।আর বর্ষা এলে বাবার ঘরে টাঙানো হয় ছোট বেলাতে রাজার ব্যবহৃত প্লাস্টিক ওয়ালক্লথ । মা কত যত্ন করে রেখছিলেন রাজার ছেলে হলে ব্যবহার করবেন বলে । ছোট বেলার জামাকাপড় , বাটি,চামচ আরো কত কি ! মা যখন মাঝে মাঝে এগুলো বের করে দেখেন , বাবা তখন চুপচাপ বসে থাকেন । আমি বুঝি- দুজনেই আসলে স্বপ্নচুড়া সিঁড়ির ধাপ টপকে নীচে নামছেন ।

বড় হবার পর থেকেই আমাকে রাজা রুনু বলে ডাকে । আমার ভাল না লাগলেও খুব বেশী খারাপ লাগে না । কাল দেখি মায়ের ঘরে টুংটাং শব্দ । গিয়ে দেখি রাজা ওর ছোটবেলার কাঁসার কাজলদানী আর পাউডারদানিটা কলেজের ব্যাগে ভরছে । আমাকে দেখে কিছুটা চমকে গেল । কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
-'রুনু আমার এক বন্ধু কাঁসা দেখেনি ...তা...ই দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি ।'এইটুকু কথা বলতে রাজা ঘেমে একাকার । আমিও কিছুই বলতে পারিনি ।

ছেলেটা বেশ বড় একটা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো ।আমার দিকে কি এক মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছে । আমি হাজার চেষ্টায়ও সরে যেতে পারছিনা । সে নেমে এসে আমার একটা হাত ধরতে যাবে দেখি কোত্থেকে যেন একটা বড় অজগর সাপ হিসহিস করতে করতে জিভ বের করে আমার দিকে তেড়ে আসছে । একটু পরে দেখি কোথায় সাপ ? সাপের মাথাটা বেশ পরিচিত একটা মেয়ের মুখ । সে বড়বড় দাঁত বের করে কড়মড় করে আমার দিকে এগিয়ে এসে কামড় দিতে যাবে । হঠাৎ শুনি বাবার চিৎকার -
-'হারামির বাচ্চা ...তোর কত্ত বড় সাহস ঘরের জিনিষ নিয়া বিক্রি করিস ! আর আজ আমার পকেটে হাতড়ে দেখিস টাকা আছে কিনা ?'' আর একটু হলে খাট থেকে পড়েই যেতাম । দৌড়ে গিয়ে দেখি রাজাকে ধরে বাবা তার লাঠি দিয়ে বেদম মারছে । এই নিয়ে বাবা দুদিন রাজাকে মারল । আমি ভেবে পাইনা রাজা এতো টাকা দিয়ে কি করে ? প্রতিদিন কম করে হলেও পঞ্চাশ টাকা তার চাই-ই চাই নাহলে মায়ের সাথে ঝগড়া করে । বলে
-'যদি না দিতে পারবা তাহলে বুড়া বয়সে ছেলের সাধ হইছিল কেন ? কেন জন্ম দিয়া দুনিয়ায় আনলা...গলা টিপ্পা মাইরা ফালাও নাই কেন?'

মা কাঁদে যা দেখে আমি কষ্ট পাই । টাকার অভাবে আমি সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে আর পড়তে পারিনি কিন্তু বাবা মা রাজুকে মাষ্টার দিয়েছে । লেখাপড়া শিখাতে রাজুকে যা যা করণীয় সব কিছুই করেছে । বাবা বলতেন এই রাজুই তার বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে । ডাক্তার হবে না হয় ইঞ্জিনিয়ার ! স্বপ্নের ঘোড়াকে সর্বশক্তি দিতে তার প্রতি সামান্যতম অযত্ন করেনি বাবা মা । কিন্তু তারপরও কেমন করে যেন রাজা দিনদিন রুক্ষ স্বভাবের হয়ে যাচ্ছে । বাবা কয়েকদিন পরপর উধাও হতেন ঠিকই কিন্তু যখন আসতেন তখন আনন্দের বন্যা নিয়ে আসতেন আর রাজা ঠিক এর উল্টো কাজ করছে । বাসা থেকে টাকা নিয়ে বাইরে যাচ্ছে আর সাথে করে আনছে নেশাতুর দেহ । যা মানুষকে অমানুষ করে দেয় । বাবার এতো ভালোবাসা , মায়ের আদর মাখা মমতা আর বোনের স্নেহ রাজাকে স্বাভাবিকভাবে ধরে রাখতে পারছেনা ।

এক এক করে বাসার পিতলের প্লেট, গ্লাস, বাটি ,কলস সব উধাও হতে থাকে । রাজা এখন অনেক রাতে বাসায় আসে আর যখন আসে তখন সে অন্য জগতের মানুষ ।এই বয়সেই সুবাসী পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে ঘরে ফিরে । সাথে থাকে আরেকটা উটকো গন্ধ যা কিছুটা অপরিচিত লাগে আমার কাছে । তবে বাবার কাছে না আর তাই তিনি বুঝে জান জমিদারীর রক্তে নতুন কোন পথের সন্ধান দিতে চলেছে তার বংশীয় প্রদীপ । আজ বাবার সাথে টাকা দিতে না পারার অক্ষমতার তর্কের সময়ে রাজা বাবাকে ধাক্কা মারে । আর বাবা ভারসাম্য রক্ষা না করতে পেরে দেয়ালে মাথা ঢুঁকে দেন । ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় কিন্তু রাজা সেদিকে না তাকিয়ে বের হয়ে যায় । মা আর বাবা জড়াজড়ি করে চোখের জলে বুক ভাসান আর হাতড়ে খোঁজেন অজ্ঞাত ভুলের অক্ষরনামা ।

আমার প্রিয় জায়গাটাতে বসে আজ কিছু খুঁজে চলে আমার ব্যাথাতুর তৃষ্ণার্ত দুটি চোখ । কলেজের পিছন দিকটাতে ধোয়া দেখতে পাই । আমার এই জায়গা থেকে স্পষ্ট দেখতে পাই কিছু জোনাক জ্বলা আলো । সোডিয়ামের আলোয় কিছু ছায়ামূর্তি পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ে কলেজের পিছনের এই দিকটাতে । আমি আমার চোখ দুটো যথাসম্ভব প্রসারিত করে দেখতে থাকি । একটা মুখ আমার সত্ত্বাকে ধিক্কার দেয় । নিভে যাওয়া কিছু অস্পষ্ট ঘটনা আবার জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠে সামনে এসে দাঁড়ায়। তাহলে আমি অবিশ্বাস্য ভাবে যা ভেবেছিলাম , সময়ে অসময়ে যা আমাকে গত কয়েকটা দিন ধরে বারবার এই জায়গাটাতে টেনে এনেছে তাহলে সেটাই সত্যি ? কিন্তু এই চরম সত্যটা বাবা সইতে পারবে না জানি কিন্তু মা ? মাকে যে আমি চীরতরে হারাব ! আমি কেমন করে এই ঘটনা হজম করব ?

কলেজের পিছনের এই জায়গাটাতে একটা ছোট গেট আছে যা কলেজের শিক্ষকরা ব্যাবহার করে । দরজাটা ভীতর থেকে সচরাচর বন্ধ থাকে । খুঁট করে দরজাটা খোলার শব্দ । মন বলে দেখিস না কিন্তু বিবেক ! সে বলে একবার দেখ, হয়তো ধারণাটা ভুলও হতে পারে । খুব কষ্ট নিয়ে দেখি একটা মেয়েকে গেইট থেকে বের করে একটা রিক্সায় তুলে দেয় প্রাণবন্ত নষ্ট যুবকের ঝাঁক । মেয়েটাকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়না আমার । আমার রক্তে শীতল হাওয়া বয় । আজ মশারাও যেন খুব একটা চায়না এই শীতল নষ্টরক্ত । আধো অন্ধকারে বসে তাদের উৎসবের গান শুনতে ্পাচ্ছি তবে , এই উৎসবের কারনটা আমার অজানা নয় । মায়ের শখের পানের বাঁটাটা মা যখন আজ কোথাও পায়নি , আমি তখন মনে মনে মাকে নিজের দিব্যি দিয়ে বলেছিলাম 'মাগো নিভে যায়নি বাতি সে জ্বলছে মা দাউদাউ করে । তবে শুধু তোমাদের দেখার যে চোখ নেই ! দিব্যি খেলাম মাগো তোমাকে আর বাবাকে চীরতরে হারাতে দেব না । তোমাদেরকে নিয়ে বহুদুরে হারিয়ে যাব তবুও না '! কলেজের গেইট পার হয়ে আমার চোরা দৃষ্টি আমাদের বাড়ীর গেইটের কাছে আঁটকে যায় । দেখি একটা নুয়ে পড়া চেনা ছায়ামূর্তি । এগিয়ে যায় সে সামনে ...একটু পরে দেখি দুটো ছায়া ! নুয়ে পড়া ছায়া সোজা হয়ে হাত উঁচু করে আরেকটা ছায়ার মাথায় সজোরে বাড়ী মারে । দ্বিতীয় ছায়াটা খুব ধীর গতিতে মাটিতে পড়ে যাবার মুহূর্তেই হাত বাড়ীয়ে নুয়ে পড়া ছায়াটাকে ধরতে যায় ।সোডিয়ামের আলোয় দেখতে পাই পড়ে থাকা ছায়াকে ঘিরে জোসনার চিকমিক করা কালো স্রোত । আমার নাকে ভাসে বংশীয় ফলের ঘ্রাণ ।

পরের দিন সকালে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কি এক নিদারুণ কষ্টে কাঁদে ।আমিও বেশ শক্ত করে নিজের আত্মার সাথে জড়িয়ে ধরে রাখি আমার প্রাণপ্রিয় জন্মদাতা বাবাকে । মেঝেতে পড়ে থাকা লাঠিটাতে দেখি রক্তের ছাপ । খুব ক্ষীণ অথচ স্পষ্ট স্বরে বাবার কানে কানে বলি 'রক্তে রাঙা লাঠির আর দরকার নেই বাবা , এই দেখ তোমার চলন্ত, জলজ্যান্ত লাঠি । যে তোমাকে সেইভাবেই পথ দেখাবে যেমন করে তুমি আমার বাম হাতের তর্জনী ধরে সামনে চলতে শিখিয়েছিলে!' তুমিই তো আমার শ্রেষ্ঠ বাবা ।'
এই সমাজকে অকলুষিত করতে আমি আর বাবা নিজের রক্তের পচনের গন্ধটাকে বুকের মাঝেই দাফন দিতে চাই ।স্বপ্ন পরাহত স্থবির যোদ্ধা বাবা আর হতবিহ্বল মাকে নিয়ে একা আমি... হয়তবা নতুন সূর্য উঠবে ঠিকই একদিন ! কিন্তু বংশীয় ফলের রাজ্যে সমাপনী বিউগলের সূর সারাটা কাল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে শিকলাবদ্ধ জীবনের নীল ঢেউয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য চাওয়া, সংস্কার আর বাস্তবতার ফারাকটুকু অনেক সুন্দর করে উঠে এসেছে গল্পে।
অনুপ্রাণিত হলাম ...ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সতত !
দিপা নূরী বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় লেখা গল্প। করুন। চমৎকার ভাবে লিখেছেন।
ধন্যবাদ সময় করে গল্প পড়ার জন্য ।শুভেচ্ছা রইল...
এস.কে.দোয়েল বেশ সুন্দর গল্প। ভালো লাগলো বেশ। অভিনন্দন।
ধন্যবাদ সময় করে গল্প পড়ার জন্য শুভকামনা
Jontitu আদরের সন্তান যখন নষ্ট হয়ে যায়, যখন বাবার গায়ে হাত তোলে তখন এর চেয়ে বেশী আর কি কষ্ট হতে পারে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাস্তব গল্প। অনেক ভালো লাগলো।
নেশাখোর ও কুশিক্ষিত সন্তানদের হিতাহিত জ্ঞ্যান থাকেনা -ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি এই সমাজকে অকলুষিত করতে আমি আর বাবা নিজের রক্তের পচনের গন্ধটাকে বুকের মাঝেই দাফন দিতে চাই ।স্বপ্ন পরাহত স্থবির যোদ্ধা বাবা আর হতবিহ্বল মাকে নিয়ে একা আমি... হয়তবা নতুন সূর্য উঠবে ঠিকই একদিন ! কিন্তু বংশীয় ফলের রাজ্যে সমাপনী বিউগলের সূর সারাটা কাল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে শিকলাবদ্ধ জীবনের নীল ঢেউয়ে। // osomvob rokomer valo laglo selina apa...নিগড়াবদ্ধ জীবন প্রবাহ !nam korontao sundor.......onek suvo kamona........
ধন্যবাদ গল্পের উক্ত উদ্ধৃতিগুলো ভাল লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম -ধন্যবাদ মন্তব্য দেবার জন্য ও সময় দিয়ে পড়ার জন্য শুভকামনা
মৌ রানী বাস্তবতায় লেখা গল্প। খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
তানি হক বুকের ভেতর কষ্ট উঠলে উঠলো আপু ...এই সমাজকে অকলুষিত করতে আমি আর বাবা নিজের রক্তের পচনের গন্ধটাকে বুকের মাঝেই দাফন দিতে চাই ।স্বপ্ন পরাহত স্থবির যোদ্ধা বাবা আর হতবিহ্বল মাকে নিয়ে একা আমি... হয়তবা নতুন সূর্য উঠবে ঠিকই একদিন ! কিন্তু বংশীয় ফলের রাজ্যে সমাপনী বিউগলের সূর সারাটা কাল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে শিকলাবদ্ধ জীবনের নীল ঢেউয়ে।........দারুন লিখেছেন ...পড়তে পড়তে কিছু জায়গায় চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি ..একজন সন্তান তার পিতাকে আঘাত করে এমন সত্যি আমাদের সমাজে আছে ..সেই সত্যি বুকটা ছিন্ন বিছিন্ন করে দায় ..এই অসাধারণ গল্পটির জন্য ..আপুকে সুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপু ।ধন্যযোগ
এফ, আই , জুয়েল # গল্পের সুচনা ও শিক্ষনীয় দিকটা বেশ চমৎকার । সামাজিক কুসংস্কার ও আবেগী আচঁড়ের ছোঁয়া দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে । = ৫ দিলাম ।।
অনেক ধন্যবাদ গল্প পড়ে মন্তব্য করার জন্য ।শুভেচ্ছা রইল
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন কদর্যরুপটা অপ্রকাশিত থাকলে সৌন্দর্য্য কখণোই উপভোগ্য হয় না। অনেক ধন্যবাদ এ ধরনের একটা গল্প উপস্থাপনের জন্য। দাওয়াত রইল আমার কবিতার ভুবনে।
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪